সাভারের আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় অবস্থিত থিম পার্ক খ্যাত বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র ‘নন্দন পার্ক’ দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে।
সিরাজুল হক সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ২ নং পাটলী ইউনিয়নের বাসিন্দা।
তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়ন ও আ.লীগ সরকারের পতনের পর নিজ এলাকা ছেড়ে সাভারের আশুলিয়ায় গা-ঢাকা দেন তিনি। আর আশুলিয়ায় অবস্থান নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ও প্রশাসনে প্রভাব খাটিয়ে সরিয়ে দেন নন্দন পার্কের চেয়ারম্যানকে। পরে পুরো পার্ক কয়েকদিনের জন্য দখল করে নেন সিরাজুল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সুনিপুণ এক মাসের মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে নন্দন পার্কের চেয়ারম্যান বেলাল হককে সরিয়ে দেন সিরাজুল হক। নন্দন পার্কের নামমাত্র শেয়ার কিনে সিরাজুল হক আরও দুই শেয়ার হোল্ডারকে সঙ্গে নেন। তাদের মোট শেয়ার ১১ শতাংশেরও নিচে। তারাই প্ল্যান করে প্রথমে মামলা করেন বেলাল হকের নামে। সেই মামলায় ওয়ারেন্ট জারি করে জেলে পাঠানো হয় তাকে। পথের প্রতিবন্ধকতা সরে গেলে শতভাগ শেয়ার দখল করে পার্কটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন সিরাজুল।
যদিও নন্দন পার্কে সিরাজুলের আধিপত্য বেশি দিন টেকেনি। চেয়ারম্যান বেলাল জামিনে মুক্তি পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই সিরাজুল হক দখল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দখলদারিত্বের স্বভাব যায়নি সিরাজুলের। এখনও নানাভাবে পার্কটি দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
নন্দন পার্ক দখল করার কথা স্বীকারও করেছেন সিরাজুল হক। চেয়ারম্যান বেলালকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে পার্কটি থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেই এই মাস্টার প্ল্যান করেছিলেন বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ২ নং পাটলী ইউনিয়নের পর পর দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন সিরাজুল হক। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। উপজেলায় ছিল তার ব্যাপক প্রভাব। তার দাপটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন কোণঠাসা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যান থাকাকালীন ছাত্রশিবিরের দুই কর্মীকে আটকে রেখে ইফতার মাহফিলে হামলা চালান সিরাজুল হক, যা সেসময় রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়। এছাড়াও এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মামলা-হামলাসহ নানাভাবে নির্যাতন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে সিরাজুলের বিরুদ্ধে।
২নং পাটলী ইউনিয়নের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আঙ্গুর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সিরাজুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। মানুষ হিসেবে সুবিধার ছিলেন না। শুধু আমি না, তার গ্রামের সব মানুষই তাকে খারাপ বলবে। আপনি চাইলে এলাকাবাসীর কাছে জিজ্ঞেস করুন। আমি বললে বলবেন, তার বদনাম করছি। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আসছেন না।
জানা গেছে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে যাওয়ায় চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কৃতও হয়েছিলেন সিরাজুল হক। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর নিজ এলাকা ছেড়ে সাভারের আশুলিয়ায় গা-ঢাকা দেন তিনি। এরপরই নন্দন পার্ক দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।






